কবিতা গদ্য গল্প 

মারমা লোকগল্প ।। মিথুই

একদা এক বুড়োবুড়ি নির্জন এক ছরায় গিয়ে ম্যায়াহ্‌ দিয়ে মাছ ধরছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ম্যায়াহ্‌য় একটা মাছ ধরা পরলো। মাছ পেয়ে বুড়োবুড়ি দু’জনেই খুব খুশি হলো। মাছ ধরতে পারার আনন্দে বুড়ি তার বুড়োকে বললো, – শোন, এই মাছটা আমার মেয়ে মিথুই খাবে। কিছুক্ষণ পর আরও একটি মাছ ধরা পরলো বুড়ির ম্যায়াহ্‌তে। এবারও বুড়ি একইভাবে বলে উঠলো, – শোন, এই মাছটাও আমার মেয়ে মিথুই খাবে। এইভাবে যতোবার ম্যায়াহ্‌তে মাছ ধরা পরলো ঠিক ততোবারই বুড়ি একই কথা বলতে লাগলো, “এই শোন, এই মাছটা আমার মেয়ে মিথুই খাবে।” বারবার এই কথা শুনতে শুনতে…

Read More
কবিতা গল্প 

মারমা লোকগল্প ।। খোব্রোক

একদেশে ছিলো এক দরিদ্র লোক। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। অনেক চেষ্টা তদবির করে শেষে তার একটা বাচ্চা হয়। বাচ্চাটি মানুষের ছিলো না। বাচ্চাটি ছিলো একটা খোব্রোক। দরিদ্র লোকটি সেইসময় কাজ করতো রাজার বাড়ি। একদিন রাজা লোকটিকে ডেকে তার সারা বছরের পারিশ্রমিক দিতে চাইলেন। দরিদ্র লোকটি রাজার সামনে যেতে ভয় পেলো। সে পারিশ্রমিক আনতে খোব্রোককে পাঠালো রাজার বাড়ি। রাজা খোব্রোককে দেখে বিরক্ত হয়ে বললেন, “তুমি সামান্য এক খোব্রোক, তুমি কি করে বোঝা বইবে?” খোব্রোক বললো, “আমি পারবো রাজামশায়।” খোব্রোকের কথা শুনে রাজার খুব রাগ হলো, তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “সামান্য এক খোব্রোক,…

Read More
গল্প 

মারমা লোকগল্প ।। আপ্যায়াং

পাহাড় থেকে দূরের কোন এক গ্রামে এক অলস ব্যক্তি বাস করতো। নাম ছিলো তার আপ্যায়াৎ। সারা বছরে গোসল করতো মাত্র দুর্দিন। সেটাও এমন যে, রিং পোর্ট্রে’র দিনে প্রতিবেশিরা এসে যদি পানি ছিটিয়ে দিলো তো একটা দিন গোসল হয়ে যায়। আবার কোন একদিন যদি কোনভাবে ঝর্ণার কাছে যেতে হয়তো সেখানেও আশপাশের লোকেরা জোর করে ধরে পানিতে চুবিয়ে দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই সে ঘরে ফিরে প্রতিবেশিদের গোষ্ঠি উদ্ধার করে গালমন্দ করতে থাকে। এমনকি বিছানা থেকে উঠ বসে ভাত খেতেও আলস্য লাগে তার। হঠাৎ একদিন তার খুব আম খেতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু সে…

Read More
গদ্য গল্প 

ইনস্কেপ্যেবল মাইন্ড ।। তাইবা তুলবি

‘আমি খুন করেছিলাম’,  রবির গলা দিয়ে উষ্ণ তরল নেমে গেলো। স্বর্গে কখনো কড়া রোদ পড়ে না। মিষ্টি রোদ, মৃদু বাতাস। এখানে নরকের মতোন এতো ঝামেলা পোহাবার কোনো মানে নেই, এতো ভাবনার কোনো কারণ নেই। মাত্র সেকেন্ডে এসব ভেবে তার বন্ধু অনন্ত আলসে মুখে চোখ ফেরায়। সে এক কথায় বলতে স্বাচ্ছন্দ্যে বোধ করলো। ‘তুই এখন স্বর্গে, অতোকিছু ভাবিস না’,হাতে থাকা পাকা হলুদ ফলটা ফস ফস করে চিবুতে থাকলো সে। শুকনো পাতার মতোন মুখ হয়ে আছে রবির। রবি বলতে লাগলো, ‘দুটো ডানা ছিলো মেয়েটির। সাধারণত লোকে একে পরী বলে থাকে। মানুষ কখনো…

Read More
গদ্য গল্প 

বাদল ধারা’র দু’খানা অণুগল্প

আমতত্ত্ব আজ ভোর থেকে রবীন্দ্রনাথ আমার ভেতরে গুনগুন করে গাইছে, তাঁর হাত ধরে আমার ঘুরতে ভালো লাগে, কিছু কিছু নিঃসঙ্গ প্রহরে রবীন্দ্রনাথ আমার সঙ্গী হয়, আমার সংগীত  হয়,  হঠাৎ করে শেষের কবিতার কথা মনে পড়লো  মলাট ফুঁড়ে হাত নাড়ালো অমিত,  অমিত বললো, “যে পক্ষের দখলে শিকল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে,  অর্থাৎ জোর দিয়ে। শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে।  শিকলওয়ালা বাঁধে বটে কিন্তু ভোলায় না, আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে ভোলায়ও।  মেয়েদের কৌটো আফিমে ভরা, প্রকৃতি-শয়তানী তার যোগান দেয়।”  আমি মুচকি হেসে অমিতকে ফজলি আম খেতে…

Read More
গদ্য গল্প বিশ্বসাহিত্য 

বেচারার বউ ।। ইউন হি কাইয়ুং

সে যে ডায়েরি লেখে তা আমার জানা ছিল না। লেখালেখির ব্যাপারটা তাকে ঠিক মানায় না। যে বয়সে আত্মপ্রতিফলন কিংবা আত্মসমালোচনার মতো বিষয়গুলো ডায়েরি লেখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে সেই বয়সও তার নেই। স্কুলে থাকার সময় সে কোনো কিছু লেখার চেষ্টা করেছে বলেও আমি কখনো শুনিনি। এমনকি যে কয়টি প্রেমপত্র আমাকে লিখেছিল সেগুলোও ছিল গতানুগতিক মেয়েলি সেন্টিমেন্টের। সেগুলোতেও তার লেখালেখির প্রতিভার কোনো ছাপ ছিল না। দিনের বেলায় আমি বাড়িতেই ছিলাম। আগের রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরেছিলাম। ঘুমাতে অনেক দেরি হয়েছিল। দুপুর না গড়ানো পর্যন্ত ঘুমিয়েই ছিলাম। জেগে দেখলাম বাসায় কেউ নেই। সে…

Read More
গল্প 

পরিসমাপ্তি ।। সারোক শিকদার

লাশটা চাদরে ঢেকে আমি লিও রোজাসের প্যান ফ্লুট ছাড়লাম। শীতকাল। এক ঝাঁক তীব্র রোদ নিষিদ্ধ সিনেমার পোস্টারের আকৃতিতে লেপটে আছে মেঝেতে অথবা আমি কি এখন তুর পর্বতে দাঁড়িয়ে! দেয়াল ভেদ করে একি ঈশ্বরের আলো! আমার হাতে মসীহের লাঠির আদলে একটি ছুরি, যার জিহ্বা গড়িয়ে লোহিত ধারা নামছে…আঙুল ভিজিয়ে…কব্জি ভিজিয়ে… চকচকে টাইলসের উপর। বিন্দু বিন্দু কৃষ্ণচূড়া। অথচ আরও বেশি অন্ধকার আরও বেশি প্রয়োজন। জানলার পর্দাটা ঠিক করতে গিয়ে দেখলাম বাইরে বেশকিছু শুকনো পাতার উপর দিয়ে নয় মার্কা চকচকে কাঠবিড়াল ঘুরছে। আমার পরিচিত। একবার ইচ্ছা করছিল ওদেরকে ঘরে আমন্ত্রণ জানাতে। আবার মনে…

Read More
গল্প 

কলমি ।। তাইবা তুলবি

একটি ছোট্ট মেয়ে, তার নাম কলমি। ক্লাস টু-তে পড়ে। দেখতে মিষ্টি হলেও চুপচাপ গোছের সে নয়। বুদ্ধিমতী এবং বেশ পাকা কথাবার্তা। সে হাঁটছে তার মন যেদিকে যেতে চাইছে। স্কুল ড্রেস পড়ে হাঁটছে মুক্ত পাখির ডানার মতন উড়ু মনে। দু’পাশে গাছ মাঝে রাস্তা, ঠান্ডা হাওয়া। সাদা ফিতায় তার চুল দুলছে। অপরিচীত রাস্তায় তার হাঁটতে মোটেও দ্বিধা হচ্ছে না। স্কুল একটা জেলখানা। পোশাক পরে কয়েদিরা যেমন যায় ঠিক তেমনই, মনে মনে ভাবে কলমি। আজ সে স্কুলে যাবেই না। স্কুলে যেতে তার একদমই ভালো লাগে না। আজ সে হাঁটবে। স্কুল চুরি করবে। হাঁটতে…

Read More
গল্প 

দ্বন্দ্ব ।। তাসনিম হালিম মিম

রোজকার আড্ডা দেওয়ার জায়গাটা অনেক বেশি শান্ত দেখাচ্ছে। হল্লানেই, তর্কনেই। দেখে মুহিব নিজের অজান্তেই সামান্য চমকায় তাদের পাড়ায় ঢোকবার এবং বের হবার যে একমাত্র রাস্তা সেটির মাথাতেই ঈসমাইল চাচার চায়ের দোকান। দোকান ঘেঁষে বসিয়ে রাখা তিন চারটি কাঠের বেঞ্চ মুহিব আর তার বন্ধুদের আড্ডা মেরে সময় কাটাবার তীর্থস্থান। মুহিব, অনন্ত রহমান, আর মাঝে মাঝে সেতু। এই পাড়ায় মুহিবরা আসার পর থেকেই ওদের সাথে বন্ধুত্ব। পকেটে কড়ির ঘাটতি থাকায় এবং ঈসমাইল চাচার উপর মায়া পরে যাওয়ায়, একেবারেই বাহুল্য বিবর্জিত এই চায়ের দোকান ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বসার কথা ওরা ভাবতেও পারেনা।…

Read More
গল্প 

পাতাল ভ্রমণ – শহিদুল আলম

ভেজানো পাল্লার ফাঁক গলে শীতের অন্ধকার আর নৈঃশব্দ চোয়ানো ঠাণ্ডা বাতাস তির তির করে ঘরে ঢুকছে। মশারি উঁচু করে বইটা টেবিলে রেখে দিই। মাথার কাছেই জানালা। কতোবার চিপ দিলাম, থাকে না, পড়ে যায় আর ঠাণ্ডা বাতাস সুঁচের মতো বিদ্ধ করে কম্বলের সমস্ত ওম্ কেড়ে নেয়। এসব ছাড়িয়েও অনেকক্ষণ আমার সমস্ত অনুভূতি জুড়ে রাজত্ব করে সদ্যপঠিত উপন্যাসের নায়ক রাসকলনিকভ। দুই মহিলাকে খুন করে ওভারকোটের ভেতর রক্তমাখা কুড়ালটা লুকিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে পালাচ্ছে ও…কে

Read More