গদ্য 

ধরা যাক দু’একটা ইঁদুর এবার—।। হাসিন এহ্সাস লগ্ন

বার্জার পেইন্টের ঝাঁঝালো ঘ্রাণ আমাকে সবসময় টানে। নেইলপলিশ আর স্পিরিট। কাঠের দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময় বার্নিশ। ছোটবেলা থেকে এখনও অবধি নেইলপলিশ খাই। এলোপাতাড়ি মেখে থাকে ঠোঁটের আশপাশে। ওই ছোটবেলায় ছেঁড়া জুতার বিনিময়ে কটকটিঅলার পেছনে ছুটতে ছুটতে, কিংবা কাকের নিয়ে যাওয়া সাবানের পেছনে দৌঁড়োতে দৌঁড়োতে একসময় দেখলাম আমার ভালো লাগছে না। কিছু করছি না। কোথাও যাচ্ছি না। সেসময় এক বন্ধু জুটে গ্যালো। সে বলছে, my weariness amazes me. সে নাকি বিধ্বস্ত কোনো ভাঁড়ের সুর নিয়ে আর ভাবতে চায় না। তারপর একদিন পেলাম অন্যজনকে। ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে? চমৎকার!…

Read More
গদ্য প্রবন্ধ 

আর্চার কেন্ট ব্লাড।। আহমেদ মুনওয়ার মাহবুব

আর্চার কেন্ট ব্লাড বাঙালিদের কাছে সুপরিচিত তার ব্লাড টেলিগ্রামের মাধ্যমে । মার্কিন কূটনীতিক আর্চার কেন্ট ব্লাড ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হন। যদিও এর আগে ষাটের দশকের শুরুতে তিনি ঢাকায় কূটনৈতিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ব্লাড ছিলেন মার্কিন সরকারের সাথে বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগের সূত্র। পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতা বন্ধে মার্কিন সরকারকে ব্লাড যে কঠোর ভাষায়  টেলিগ্রামটি পাঠান তা ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে খ্যাত। ১৯৭০ সালের মার্চে ব্লাড যখন ঢাকায় আসেন তখন সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিলো। দূতাবাসে বসে নির্বাচন পর্ব পর্যবেক্ষণ করাই ছিলো ব্লাডের কাজ এবং সেই অনুযায়ি…

Read More
গদ্য প্রবন্ধ 

ইতিহাসে আরমানিটোলা মাঠ।।আহমেদ মুনওয়ার মাহবুব

আরমানিটোলা মাঠ নিছক মাঠ নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপুর্ণ ঘটনার সাক্ষী এই মাঠ। এই মাঠের গল্প বলার আগে আমরা আমরা একটু পেছনে চলে যেতে চাই।  ষোল শতকের   আর্মেনিয়া পারস্যের সাফাভি রাজবংশের অন্তর্ভুক্ত হলে আর্মেনিয়ানরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ১৮ শতকে মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ঢাকায় তাদের আগমন। ঢাকায় তখন কাঁচা পাটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বানিজ্য সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। ঢাকা থেকে নদীপথে কাচা পাট পাঠানো হতো কলকাতায় । ঢাকার পাটকে ঘিরে কলকাতায় গড়ে উঠেছিলো বড়  বড় সব জুটমিল। তাই পাটের ব্যবসায় মন দিয়েছিলেন ঢাকার আর্মেনীয়রা। আব্রাহাম পোগজ, এম ডেভিড, জে…

Read More
আলাপচারিতা কবিতা গদ্য বিশ্বসাহিত্য 

জিম মরিসন এর “প্রস্তাবনা” এবং কয়েকটি কবিতা ।। ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ

আমি মনে করি সাক্ষাৎকার হলো শিল্পের নতুন একটি কাঠামো। আমি মনে করি আত্ম-সাক্ষাৎকার হলো সৃজনশীলতার নির্যাস। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করা আর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা। লেখক অব্যক্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।   এটা কাঠগড়ায় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো। এটা সেই অদ্ভুত ক্ষেত্র যেখানে তুমি চেষ্টা করো আর অতীতে ঘটে যাওয়া কিছুকে সেঁটে রাখো আর তুমি যা করার চেষ্টা করছিলে তা মনে রাখার জন্য একান্তভাবে চেষ্টা করো। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানসিক অনুশীলন। একটা সাক্ষাৎকার তোমাকে প্রায়শই তোমার মনের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার সুযোগ করে দেয়— যা আসলে আমার কাছে শিল্পই। একটা সাক্ষাৎকার তোমাকে…

Read More
কবিতা গদ্য গল্প 

মারমা লোকগল্প ।। মিথুই

একদা এক বুড়োবুড়ি নির্জন এক ছরায় গিয়ে ম্যায়াহ্‌ দিয়ে মাছ ধরছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ম্যায়াহ্‌য় একটা মাছ ধরা পরলো। মাছ পেয়ে বুড়োবুড়ি দু’জনেই খুব খুশি হলো। মাছ ধরতে পারার আনন্দে বুড়ি তার বুড়োকে বললো, – শোন, এই মাছটা আমার মেয়ে মিথুই খাবে। কিছুক্ষণ পর আরও একটি মাছ ধরা পরলো বুড়ির ম্যায়াহ্‌তে। এবারও বুড়ি একইভাবে বলে উঠলো, – শোন, এই মাছটাও আমার মেয়ে মিথুই খাবে। এইভাবে যতোবার ম্যায়াহ্‌তে মাছ ধরা পরলো ঠিক ততোবারই বুড়ি একই কথা বলতে লাগলো, “এই শোন, এই মাছটা আমার মেয়ে মিথুই খাবে।” বারবার এই কথা শুনতে শুনতে…

Read More
কবিতা গদ্য মুক্ত গদ্য 

স্থানিকের চিহ্ন ।। জ্যোতি পোদ্দার

মিশ্র বৃক্ষের বনে চোখ ক্লান্ত হয় না— বরং ছলকে ছলকে বিস্ফারিত হয়ে ওঠে। হাঁটতে হাঁটতে শরীর অবসন্ন হয়ে পড়লে এমন জায়গা পেলে হাত পা মেলে দেবার জন্য শরীর নেচে ওঠে। মন আকুপাকু করে। যেন কতকাল পর সবুজ আর সবুজ আর ঘন সবুজের মায়াবী বিছানা পেতে রেখেছে আমার জন্য। গা এলিয়ে দিলেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ নীচু হয়ে আমার পাশে বসে চুলে বিলি কেটে কেটে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। সকালের রোদে পাতার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে যতটুকু আলোর বিস্তার ঠিক ততটুকুই বরফির ছাঁচের মত ছায়া পড়ে নিকানো উঠান জুড়ে। ভারি সুন্দর লাগে আলো…

Read More
কবিতা গল্প 

মারমা লোকগল্প ।। খোব্রোক

একদেশে ছিলো এক দরিদ্র লোক। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। অনেক চেষ্টা তদবির করে শেষে তার একটা বাচ্চা হয়। বাচ্চাটি মানুষের ছিলো না। বাচ্চাটি ছিলো একটা খোব্রোক। দরিদ্র লোকটি সেইসময় কাজ করতো রাজার বাড়ি। একদিন রাজা লোকটিকে ডেকে তার সারা বছরের পারিশ্রমিক দিতে চাইলেন। দরিদ্র লোকটি রাজার সামনে যেতে ভয় পেলো। সে পারিশ্রমিক আনতে খোব্রোককে পাঠালো রাজার বাড়ি। রাজা খোব্রোককে দেখে বিরক্ত হয়ে বললেন, “তুমি সামান্য এক খোব্রোক, তুমি কি করে বোঝা বইবে?” খোব্রোক বললো, “আমি পারবো রাজামশায়।” খোব্রোকের কথা শুনে রাজার খুব রাগ হলো, তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “সামান্য এক খোব্রোক,…

Read More
গল্প 

মারমা লোকগল্প ।। আপ্যায়াং

পাহাড় থেকে দূরের কোন এক গ্রামে এক অলস ব্যক্তি বাস করতো। নাম ছিলো তার আপ্যায়াৎ। সারা বছরে গোসল করতো মাত্র দুর্দিন। সেটাও এমন যে, রিং পোর্ট্রে’র দিনে প্রতিবেশিরা এসে যদি পানি ছিটিয়ে দিলো তো একটা দিন গোসল হয়ে যায়। আবার কোন একদিন যদি কোনভাবে ঝর্ণার কাছে যেতে হয়তো সেখানেও আশপাশের লোকেরা জোর করে ধরে পানিতে চুবিয়ে দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই সে ঘরে ফিরে প্রতিবেশিদের গোষ্ঠি উদ্ধার করে গালমন্দ করতে থাকে। এমনকি বিছানা থেকে উঠ বসে ভাত খেতেও আলস্য লাগে তার। হঠাৎ একদিন তার খুব আম খেতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু সে…

Read More
গদ্য গল্প 

ইনস্কেপ্যেবল মাইন্ড ।। তাইবা তুলবি

‘আমি খুন করেছিলাম’,  রবির গলা দিয়ে উষ্ণ তরল নেমে গেলো। স্বর্গে কখনো কড়া রোদ পড়ে না। মিষ্টি রোদ, মৃদু বাতাস। এখানে নরকের মতোন এতো ঝামেলা পোহাবার কোনো মানে নেই, এতো ভাবনার কোনো কারণ নেই। মাত্র সেকেন্ডে এসব ভেবে তার বন্ধু অনন্ত আলসে মুখে চোখ ফেরায়। সে এক কথায় বলতে স্বাচ্ছন্দ্যে বোধ করলো। ‘তুই এখন স্বর্গে, অতোকিছু ভাবিস না’,হাতে থাকা পাকা হলুদ ফলটা ফস ফস করে চিবুতে থাকলো সে। শুকনো পাতার মতোন মুখ হয়ে আছে রবির। রবি বলতে লাগলো, ‘দুটো ডানা ছিলো মেয়েটির। সাধারণত লোকে একে পরী বলে থাকে। মানুষ কখনো…

Read More
গদ্য গল্প 

বাদল ধারা’র দু’খানা অণুগল্প

আমতত্ত্ব আজ ভোর থেকে রবীন্দ্রনাথ আমার ভেতরে গুনগুন করে গাইছে, তাঁর হাত ধরে আমার ঘুরতে ভালো লাগে, কিছু কিছু নিঃসঙ্গ প্রহরে রবীন্দ্রনাথ আমার সঙ্গী হয়, আমার সংগীত  হয়,  হঠাৎ করে শেষের কবিতার কথা মনে পড়লো  মলাট ফুঁড়ে হাত নাড়ালো অমিত,  অমিত বললো, “যে পক্ষের দখলে শিকল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে,  অর্থাৎ জোর দিয়ে। শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে।  শিকলওয়ালা বাঁধে বটে কিন্তু ভোলায় না, আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে ভোলায়ও।  মেয়েদের কৌটো আফিমে ভরা, প্রকৃতি-শয়তানী তার যোগান দেয়।”  আমি মুচকি হেসে অমিতকে ফজলি আম খেতে…

Read More