আফগানি কবিতা- মুজগান ফারামানেশ ।। ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মুজগান ফারামানেশ ১৯৯০ সালে আফগানিস্তানের হেরাত শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। তিনি হেরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যে ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি হেরাত সাহিত্য সঙ্ঘের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি সাপ্তাহিক কবিতা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। তার প্রথম কবিতার বই ‘আন্দিশাহেই-ই দার্দ-আলুদ’ (বেদনা সংক্রমিত প্রতিফলন) প্রকাশিত হয় হেরাতে ২০১১ সালে। তার দ্বিতীয় কবিতার বইয়ের নাম ‘গেরেয়ে কুর’ (অন্ধ গিঁট)। তার লেখা পত্রিকা, রেডিও এবং টিভিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে প্রকাশিত হয়।
তিনি সাধারণত ক্লাসিক্যাল ফর্ম যেমন গজল, রুবাই (চতুষ্পদী শ্লোক) এবং মসনবী (ছন্দোময় যুগল) ইত্যাদি গতানুগতিক শৈলীতে লিখে থাকেন। ফারামানেশ সহ সমসাময়িক ফার্সি ভাষার কবিরা এই ক্লাসিক্যাল ফর্ম বা ধ্রুপদী শৈলীতে সিগারেট, আত্মঘাতী বোমা ইত্যাদি সাম্প্রতিক বিষয়গুলোকে শুধুমাত্র ব্যবহারই করছেন না বরং ফর্মের আঁটসাঁট নিয়মগুলোকেও ভেঙে দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- অনেক আধুনিক গজল লেখক একটি গজলের শেষ শ্লোকে তাদের নিজের নাম লেখার নিয়ম বা প্রয়োজনীয়তাকে দূর করে দিয়েছেন।
গজল
১
খোদা তোমাকে দুঃখ আর বেদনার ছোট্ট মুহুর্ত থেকেও রক্ষা করুক
প্রেমের প্রশস্থ পেয়ালা জীবনের শিরায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে ঢেলে দেউক
তিনি তোমার চোখকে শিশিরে নিমজ্জিত হওয়া থেকে করুক রক্ষা
যদিও খোদা জানেন আমি দেখেছি তাদের কষ্টের ভাগ নেওয়া
তিনি যেনো তোমাকে নিয়ে যান গানের সুদৃশ্য বাগানে
তোমার হৃদয়ের ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে রাখেন খরাকে
তুমি যেনো আমার মতো না হও- দুঃখের হিংস্রতা লিখতে আকুল না হও
কিন্তু তার দাগ লিখে রাখার কালি থেকে কখনোই যেনো বঞ্চিত না হও
যদিও আমি ক্লান্ত আর আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ
তবু আমি যে কষ্ট সহ্য করেছি তা থেকে খোদা তোমাকে রক্ষা করুক
২
ফাটল-প্রবণ কাঁচের মতো- আয়নার আবছায়া ধূলোর মতো
খোদা আমাকে তোমার প্রেমের দৃষ্টিতে অস্থির করে তুলেছেন
আমার জন্য হও নিঃশ্বাস- আমার জন্য হও শুধু থাকার আশ্বাস
তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি নেই সিমাহীন যন্ত্রণার ভার
আমি শরতের পদচিহ্ন আর শীতের তিক্ত গল্পে জর্জরিত
এ দেহের ডাল শুকিয়ে গেলে আর আসবে কোথায় বসন্ত?
দিন কেটে যায় মলিন মঞ্চে- অনিশ্চিত আশায় কানায় কানায় হই পূর্ণ
আমি ডুবে যাই বিশৃঙ্খলায়- তোমাকে ছাড়াই আমি কবে হবো সম্পূর্ণ
বাকি থাকা বন্দুকের গুলি দিয়ে আমি বিক্ষিপ্ত- আমার শরীর জ্বলছে আগুনে
মৃত্যু- বেঁচে থাকা- আত্মহত্যা নাকি ভালোবাসা?
আমি হয়ে যাবো কারো আত্মহত্যার উষ্ণ শিকার
চতুষ্পদী শ্লোক
১
আমি মাথার কালোস্কার্ফে অভ্যস্ত হয়ে গেছি
আমি চাঁদের ক্ষুধার্ত রাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি
আমি সর্বদা কূপের ভেতর থেকে
ব্যথা-ভেজা গজল গাইতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি
২
আমি আয়না আর ধূলা আমার ভেতরে বয়ে যায়-
সীমাহীন প্রত্যাশা আমার ভেতরে বয়ে যায়
আমি ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা ডানাবিহীন পাখি-
সীমাহীন একাকীত্ব আমার ভেতরে বয়ে যায়
৩
তুমি আমার অন্তরজগতের কবিতাকে দাও ছন্দ
আমার নিয়তির নড়বড়ে বাটির সৌন্দর্য
এ কবিতা হতে পারে শীতলের চেয়েও শীতল
অথচ তুমি আমার উন্মাদ আত্মায় জাগাও উত্তাপ
৪
তোমার তরে- গান তার কণ্ঠ হারাবে
আকাশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে আয়না
তোমার তরে- দেখতে পাচ্ছি- ও প্রেমের দেবতা
শহরজুড়ে দানা বাঁধবে এক ভীষণ হাঙ্গামা
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
তথ্যসূত্র :
LOAD POEMS LIKE GUNS
Women’s Poetry from Heart, Afghanistan
FARZANA MARIE
Holy Cow! Press