কবিতা গদ্য গল্প 

মারমা লোকগল্প ।। মিথুই

একদা এক বুড়োবুড়ি নির্জন এক ছরায় গিয়ে ম্যায়াহ্‌ দিয়ে মাছ ধরছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ম্যায়াহ্‌য় একটা মাছ ধরা পরলো। মাছ পেয়ে বুড়োবুড়ি দু’জনেই খুব খুশি হলো। মাছ ধরতে পারার আনন্দে বুড়ি তার বুড়োকে বললো,

– শোন, এই মাছটা আমার মেয়ে মিথুই খাবে।

কিছুক্ষণ পর আরও একটি মাছ ধরা পরলো বুড়ির ম্যায়াহ্‌তে। এবারও বুড়ি একইভাবে বলে উঠলো,

– শোন, এই মাছটাও আমার মেয়ে মিথুই খাবে।

এইভাবে যতোবার ম্যায়াহ্‌তে মাছ ধরা পরলো ঠিক ততোবারই বুড়ি একই কথা বলতে লাগলো, “এই শোন, এই মাছটা আমার মেয়ে মিথুই খাবে।” বারবার এই কথা শুনতে শুনতে বুড়ো বিরক্ত হয়ে গেলো। বুড়ো রেগে গিয়ে বুড়িকে বললো,

– সব মাছ কি তোমার মেয়ে একাই খাবে?

রাগান্বিত বুড়ো ম্যায়াহ্ দিয়ে মাছ ধরতে ধরতে, শেষ সময় বুড়িকে মেরে ছরায় ফেলে দিলো। বুড়িকে ছরার পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে একা একা মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।

মিথুই তার বুড়ো বাবাকে একা ঘরে ফিরতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

– মা কোথায়?

বুড়ো উত্তরে বললো,

– তোমার মা ছরায় থবুইং কাচতেছে।

মিথুই বাবার হাত থেকে মাছ নিয়ে উঠানে বসে মাছ কাটলে লাগলো। ধীরে ধীরে বেলা গড়িয়ে গেলেও মিথুইয়ের মা আর ফিরে এলো না। এক সময় মিথুইয়ের মনে সন্দেহ জাগলো। সে আবারো তার বুড়ো বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,

– বাবা, মা কোথায়? যা এখনো আসছে না কেন?

বুড়ো এবার উত্তরে বললো,

– তোমার যা আঙ্গি কাচতেছে।

এইভাবে আরো কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর মিথুই আবারো তার বুড়ো বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,

– বলো আমার মা কোথায়?

বুড়ো এবার বিরক্ত হয়ে, মেয়েকে শান্ত্বনা দেবার জন্য বানিয়ে বানিয়ে বলে দিলো যে, তার মা কচ্ছপ হয়ে ছরার পানিতে থেকে গেছে। বাবার কথা শুনে মেয়েটা কান্নায় ভেঙে পড়লো। বুড়ো তার মেয়ের কান্না থামানোর জন্য তঙসে বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

“যাও এই গুলি তোমার মামিদের কাছে বিক্রি করে এসো”।

মেয়েটি ছোট ছোট তঙ হাতে নিয়ে তার মামিদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

– মামি, মামি, আমার বাবার হাতে বানানো তঙ। খুবই সুন্দর, কিনবা?

মামি উত্তরে বললো,

– না মিথুই, আমাদের তঙের দরকার নেই। আমার স্বামী আর ছেলেদের হাতে বানানো তঙগুলোই ব্যবহার করে শেষ করতে পারছি না। নতুন করে তঙ কিনে কি করবো?

মা হারিয়ে এইভাবে মিথুই এবাড়ি ওবাড়ি কেঁদে-কেটে পার করতে লাগলো। এরমধ্যেই কিছুদিন পর বুড়োটা মাছ ধরতে গিয়ে এক ফুলুমার পাল্লায় পরলো। ফুলুমা সেই সময় এক সুন্দরী রমণীর বেশ ধরে বনে-বাদারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। সুন্দরী ফুলুমার রুপের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে বুড়ো তাকে বিয়ে করে ঘরে তুললো। সেই সময় ফুলুমার এক মেয়ে ছিলো। মেয়েটির নাম ছিলো ক্রাক্‌খি-মা। ক্রাক্‌খি-মা’ও ফুলুমার সাথে বুড়োর বাড়িতে এসে উঠলো। শুরু হলো নতুন সংসার। নতুন সংসারে এসে ফুলুমা সব ভালো ভালো খাবার নিজের মেয়ে ক্রাক্‌খি-মা’কে খেতে দিতো। ভালো কাপড়-চোপরগুলো পর্যন্ত তার নিজের মেয়ে ক্রাক্‌খি-মা’কে পরতে দিতো। আর মিথুইকে পরাতো ময়লা-ছেঁড়া কাপড়, আর খাবার বেলায় যতো এঁটো-কাঁটা আর বাসি-পঁচা দিতো মিথুইকে। সংসারে যতো কাজ, সব মিথুইকে দিয়ে করাতো ফুলুমা। সংসারের কাজ আর ফুলুমার অত্যাচারে কিছুদিনের মধ্যেই মিথুই একেবারে মলিন হয়ে গেলো। এর মধ্যে ফুলুমার হুকুমে একদিন মিথুই ছরার পাড়ে ছাগল চড়াতে গেলো। ছরার পানিতে চোখ পরতেই মিথুইয়ের মনে পড়লো, তার মায়ের কথা। তার বাবা বলেছিলো, তার মা নাকি কচ্ছপ হয়ে ছরার পানিতে চলে গ্যাছে। ছরার পানির দিকে তাকিয়ে মিথুই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ঝর্ণার মতো ঝরঝর করে চোখের পানি নেমে এলো। ছরার দিকে তাকিয়ে মিথুই কান্না করতে করতে বললো,

– মা, ও কচ্ছপ মা, তুমি কোথায়? তোমার আদরের মেয়েকে ফেলে তুমি কেন কচ্ছপ হয়ে গেলে মা? ও মা, ও কচ্ছপ মা, আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছো? তুমি তো জানো, আমার বাবা একটা বউপাগল মানুষ। তুমি চলে যাওয়ার পর বাবা আবারও বিয়ে করেছে। খুঁজে খুঁজে এবার সে একটা ফুলুমাকে বিয়ে করে ঘরে এনেছে। ঐ ফুলুমা আর তার মেয়ে সবসময় আমাকে অত্যাচার করে। ওরা নিজেরা ভালো ভালো খাবার খায় আর আমাকে দেয় পঁচা-বাসি খাবার। ওদের সব কাজ আমাকে দিয়ে করায়, কাপড় কাঁচায়, উঠান ঝাড়ু দেওয়ায়। পাহাড়ে আলু আনতে পাঠায়। ফুলুমা আমার উপর অত্যাচার করলেও বাবা ওদের কিছুই বলে না। মা, আমি আর এতো কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। তুমি কোথায় মা?

মেয়ের কান্না শুনে কচ্ছপ-মা আর জলে থাকতে পারলো না। সে ছরার পাড়ে ছুটে এলো। মেয়ের দুঃখে তারও চোখের পানি ঝরতে লাগলো। কচ্ছপ-মায়ের চোখের পানি ছড়ার পানিতে মিশে আরও নীল হয়ে যেতে লাগলো। মাকে দেখতে পেয়ে মেয়ে মিথুই আবেগ ধরে রাখতে পারলো না। অনেক কান্না-কাটি শেষে, মা-মেয়ে বিদায় নিলো। বিদায়বেলায় কচ্ছপ-মা মিথুইকে বলে দিলো, মন খারাপ হলেই সে যেন ছরার পাশে। এসে মা’কে ডাক দেয়। তিনবার ডাক দিলেই কচ্ছপ-মা এসে দেখা করবে। আর মেয়ের জন্য ভালো ভালো খাবার এনে দেবে। মায়ের কথা শুনে মিথুইয়ের সব দুঃখ উবে গেলো।

এরপর যখনই মিথুই এর মন খারাপ হতো, ছরার পাশে এসে সে তার মাকে ডাক দিতো। কচ্ছপ-মা’ও তার মেয়ের জন্য ছরার উপর দিয়ে মাছ-মাংস-খাবার তুলে দিতো। মায়ের ভালোবাসা আর ভালো ভালো খাবার পেয়ে কিছুদিনের মধ্যেই মিথুই অনেক নাদুস-নুদুস আর সুন্দর হয়ে উঠতে লাগলো। এতো অত্যাচার আর কম খাবারেও মিথুইয়ের হঠাৎ করে সুন্দর হতে দেখে ফুলুমার মনে সন্দেহ জাগলো। ভাবলো, এই পঁচা-বাসি খাবার খেয়ে তো ওর শরীর আমার মেয়ে ক্রাক্‌খি-মা’র থেকে বেশি সুন্দর হওয়ার কথা না। একদিন কুলুমা তার মেয়ে ক্রাকখি-মাকে ডেকে বললো,

“যাও তো ক্রাক্‌খি, মিথুই ছাগল চড়াতে যাবার সময় কুকুর সেজে পিছু নিয়ে দেখো তো, সে কোথায় যায়? কি কি খেতে পায়?”

ক্রাক্‌খি মায়ের নির্দেশ পেয়ে একদিন কুকুর সেজে মিথুইয়ের পিছু নিলো। মিথুই সেদিনও আগের দিনের মতো ছরায় দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকলো,

– কচ্ছপ-মা, তুমি জানো, আমার বাবা একটা বউপাগল। তুমি কচ্ছপ হয়ে যাবার পর বাবা তো আর বউ খুঁজে পায় না। খুঁজতে খুঁজতে শেষে কি-না ছরার পাশে খুঁজে পেলো এক ফুলুমাকে। সেই ফুলুমাকেই বাবা বউ করে ঘরে তুললো। জানো মা, ওরা নিজেরা ভালো ভালো খাবার খায় আর আমাকে দেয় পঁচা-বাসি খাবার।

এই কথা শুনে মা কচ্ছপের মেয়ের জন্য খুব দুঃখ হলো। সে ছরার তলা থেকে মেয়ের জন্যে মাছ-মাংস, ভালো খাবার ছরার পাড়ে তুলে দিলো। মিথুই খাবার পেয়ে খুব খুশি। পেট ভরে সেইসব খাবার খেয়ে, উচ্ছিষ্ট হাড্ডিগুলো ছুঁড়ে দিলো সেই কুকুরের দিকে। রাগে অপমানে সাথে সাথে “জানি জানি, ঘেউ ঘেউ” করে ডেকে ক্রাক্‌খি কুকুর সেজে পালিয়ে গেলো। ফুলুমা তার মেয়ের কাছ থেকে সবকিছু শুনে একদিন অসুস্থতার ভান করে বিছানায় শুয়ে থাকলো। তারপর বুড়োকে দেখে কোঁকাতে কোঁকাতে বললো,

– আমার হাড্ডি সবকটা মনে হয় ব্যথায় ভেঙে গেলো গো। ও বুড়ো, যাও না একটু বৈদ্যের কাছে। দেখো না, আমার কি হয়েছে।

সুন্দরী বউ অসুস্থ, বুড়োর তো মাথা খারাপ হবার দশা। এবার বুড়ো ছুটলো বৈদ্যের কাছে। বৈদ্যের কাছে বুড়োকে যেতে দেখেই ফুলুমা হুটহাট করে বিছানা থেকে উঠে এক যুবতী বৈদ্য সেজে বুড়োর পথের ধারে একটা পুরনো বাড়ির দাওয়ায় বসে রইলো। বুড়োকে ছুটতে দেখে ফুলুমা ডেকে জিজ্ঞেস করলো,

– ও দাদু কোথায় যাও?

বুড়ো বললো,

– তোমার দাদি অসুস্থ। তাই বৈদ্যের কাছে যাচ্ছি।

– বেশ তো, তা বলি যে, অতোদূরে না গিয়ে আমার কাছেই আসো না। আমিও তো গুণে-পড়ে দেখতে পারি।

যুবতী বৈদ্যের কথা শুনে বুড়ো খানিকটা চিন্তা করলো। বুড়োর চিন্তা করার ধরণ দেখে মনে মনে হাসলো ফুলুমা। বুড়োকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে বেশ ঢঙ করে বললো,

– অতো চিন্তা করার কি আছে? এমনিতেও দাদি তো বুড়ি হয়ে গেছে। তা চিকিৎসাই যদি দরকার, আমার কাছে এসো না, আমিই ও বুড়িকে ভালো করে দেবো।

যুবতী বৈদ্যের ছলাকলায় বুড়ো ফেঁসে গেলো। সে চিন্তা করা বাদ দিয়ে যুবতী বৈদ্যের কাছে এগিয়ে গেলো। যুবতীর বেশ ধরে ফুলুমা বারান্দায় দুই পা ছড়িয়ে নানা রকম আঁকা-উকি করতে লাগলো। ক্ষণে ক্ষণে বুড়োর দিকে তাকিয়ে রসালো হাসি হাসতে লাগলো। হাসি থামিয়ে আবার মন্ত্র-তন্ত্র আর নানারকম গণনা করতে লাগলো। মন্ত্র-তন্ত্র আর গণনা শেষ করে নিজের দুই পা গুটিয়ে বুড়োর মুখোমুখি বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

– অতো চিন্তার কিছু নেই দাদু। রোগ যা হয়েছে, বড় জটিল। তবে চিকিৎসা অতো কঠিন কিছু না। একটা মাত্র উপায় আছে এই রোগের জন্য, তা হলো, ঘরের সবচে বড় শূকরটা কেটে চুং পুজো করলেই দাদি সুস্থ হয়ে উঠবে।

যুবতি বৈদ্যের কথা শুনে বুড়ো স্বস্তি পেলেন। এ আর এমন কি কঠিন কাজ! বুড়ো ঘরে ফিরে পরেরদিনই ঘরের বড় শূকরটা কেটে বেশ আয়োজন করে চুং পুজো করলো। পুজো শেষ হয়ে গেলে ফুলুমা এবার একটু সুস্থ হবার ভান করলো। কয়েকদিন পর আবারও ফুলুমা বিছানাগত হবার ভান করলো। অসুস্থ হবার ভান করে বুড়োকে বললো,

– যাও তো বুড়ো, আরও একবার ওই বৈদ্যের কাছে।

বুড়োকে যেতে দেখে ফুলুমা তাড়াতাড়ি করে উঠে আবারো সেই যুবতী বৈদ্য সেজে ওই ঘরের দাওয়ায় বসে রইলো। বুড়োকে আসতে দেখে এবার সে জিজ্ঞেস করলো,

– আবার কি হলো গো বুড়ো? এবার কে অসুস্থ হলো? বুড়ো যুবতী বৈদ্যকে সব খুলে বললো।

এবারও আগের মতো দুইদিকে দুই পা ছড়িয়ে নানা রকম মন্ত্র তন্ত্র-আর দাগ গণনা করে ফুলুমা বললো,

– এ রোগ বড় জটিল গো দাদু। এবার আর শূকরে কাজ হবে না। পাহাড়ের নিচে যে ছরাটা আছে, ঐ ছরায় একটা কচ্ছপ আছে। কেবল ঐ কচ্ছপটা ধরে এনে যদি চুং পুজো করতে পারো তবেই তোমার বুড়ি সুস্থ হতে পারে, এছাড়া আর কোন উপায় নেই।

বুড়ো ফুলুমাকে বাঁচানোর জন্য যুবতী বৈদ্যের কথা শুনে ছড়ায় গিয়ে নুঙ পেতে কচ্ছপটাকে ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু লাভ হলো না। বুড়ো এবার কোয়াইং নিয়ে এলো ছরার পাশে। কচ্ছপ ধরার জন্য বুড়োকে প্রাণপণ চেষ্টা করতে দেখে মিথুই বুঝতে পারলো, এবার আর তার মায়ের আর রেহাই নেই। শয়তান ফুলুমার ষড়যন্ত্রে তার বউপাগল বাবা এবার নিশ্চয় তার মাকে মেরে ফেলবে। মাকে বাঁচানোর জন্য মিথুই তার বাবার আগেই নুঙ নিয়ে ছরায় পৌঁছে গেলো। ছরার পাড়ে গিয়ে মিথুই তার নুঙ এগিয়ে দিয়ে বললো,

“মা, আমার আর কিছুই করার রইলো না। চলে এসো মা, আমার নুঙ-এ ঢুকে পড়ো।”

কচ্ছপটি মেয়ের কথা শুনে তার নুঙ-এ ঢুকে পড়লো। কিন্তু ফুলুমা আগে থেকেই মিথুইকে সন্দেহ করছিলো। সে বুড়োকে পাঠিয়ে দিলো মিথুইয়ের কাছে, যেন কচ্ছপটা ধরা পরলেই তা কেড়ে নিয়ে আসে। বুড়োটা তখন বউয়ের অসুখে আধাপাগল হয়ে আছে। আড়াল থেকে বুড়ো মিথুইয়ের দিকে নজর রাখতে লাগলো। যেই না মিথুইয়ের নুঙ এর মধ্যে কচ্ছপটা উঠে এলো অমনি বুড়োটা আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে মেয়ের কাছ থেকে কেড়ে নিলো। তারপর বাড়িতে এনে বুড়ো কচ্ছপটা কেটে খুব আয়োজন করে চুং পুজো করলো। অনেক চেষ্টা করেও মিথুই তার মা কচ্ছপকে বাঁচাতে পারলো না। নিষ্ঠুর ফুলুমা কচ্ছপটি কেটে মিথুইকেই রান্না করতে দিলো। কষ্টে চোখের জল মুছতে মুছতে মিথুই কচ্ছপটিকে রান্না করতে গেলো। চুলায় আগুন জ্বালানোর সাথে সাথে পাতিল থেকে কচ্ছপটি কেঁদে কেঁদে বললো,

“আহ্! আমার মিথুই যে স্তন থেকে দুধ পান করে বড় হলো, সেই স্তনটি আমার পুড়ে গেলো”।

মিথুই তা শুনে কান্না করতে লাগলো আর যতখানি পারা যায় কম আগুনে রান্না করার চেষ্টা করলো। ক্রাক্‌খি তা দেখে রেগে গিয়ে চুলার আগুন আরও বাড়িয়ে দিলো। রান্না শেষ করে মিথুই বাদে সকলে মিলে কচ্ছপটাকে খুব মজা করে খেয়ে নিলো। খেয়ে দেয়ে ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট থেকে দু’টো হাড্ডি নিয়ে মিথুই মাটিতে পটুতে দিয়ে বললো, একটা চিং গাছ হোক আর একটা ম্ৰা গাছ হোক। কিছুদিন পর সত্যি সত্যি সেখানে একটা চিং গাছ আর একটা ম্রা গাছ লতার মতো বেয়ে উঠলো। মিথুই যখন ধান ভাঙে তখন এই দুইটা গাছ মাথার উপর ছায়া দিতে লাগলো। এভাবে কেটে গেলো অনেক দিন। এরপর হঠাৎ একদিন এক রাজপুত্র হাতিতে চড়ে ওই ফুলুম্বর ঘরের সামনে এসে এক গ্লাস পানি খেতে চাইলো। ফুলুমা তার নিজের মেয়ে ক্রাক্‌খিকে নতুন জামাকাপড় পরিয়ে এক গ্লাস পানি হাতে দিয়ে সেই রাজপুত্রের কাছে পাঠালো, রাজপুত্র যেন তার মেয়েকে দেখে পছন্দ করে এবং তার মেয়ের রুপের জালে আটকে বিয়ে করে নিয়ে যায়। কিন্তু রাজপুত্র ক্রাক্‌খির হাতের পানি গ্রহণ করলো না। রাজপুত্র ক্রাক্‌খিকে ফিরিয়ে দিয়ে বললো, মিথুইকে পাঠিয়ে দাও। ফুলুমা এই কথা শুনে মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে মিথুইকে নোংরা ছেঁড়া কাপড় পরিয়ে হাতে এক গ্লাস পানি দিয়ে পাঠালো সেই রাজপুত্রের কাছে।মিথুই পানির গ্লাস নিয়ে কাছে গেলে সাথে সাথে রাজপুত্র মিথুইকে তুলে নিয়ে চলে গেলো। রাজপ্রাসাদে ফিরে রাজপুত্র ধুমধাম করে মিথুইকে বিয়ে করলো। তারপর রাজপুত্র মিথুইকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস শুরু করলো। রাজপুত্রের ঘরে বউ হয়ে এসে বছরখানেক পরেই মিথুইয়ের কোলজুড়ে একটি ফুটফুটে বাচ্চা জন্ম নিলো। এরপর কিছুদিনের মধ্যে মিথুই আবারও গর্ভবতী হলো। কোলে একটি বাচ্চা আর এক বাচ্চা থাকলো পেটে। একদিন ক্রাক্‌খি মিথুইয়ের কাছে এসে বললো,

– দিদি, বাবা খুব অসুস্থ। দেখতে আসবে না?

মিথুই বাবার অসুস্থতার কথা শুনে দুঃখ পেলো। হাত দিয়ে বারবার চোখ মুছে বললো,

– দিদিরে, ঘরে যে অনেক কাজ। রাজার বাড়ি, চাইলেই তো আর যখন তখন যাওয়া যায় না। তুই যা, আমি ঘরের কাজ শেষ করেই চলে আসবো।

পরদিন ক্রাক্‌খি আবার এসে মিথুইকে বললো,

– দিদি, বাবা খুব অসুস্থ। মাত্র এক চামচ করে ভাত খাচ্ছে। মনে হয়, আমাদের বাবা আর বাঁচবে না। দেখতে আসবে না?

মিথুই বললো,

– ঠিকাছে, তুই যা। বাবাকে বলিস, আমি কাল সকালেই চলে আসবো।

পরদিন সকালে মিথুই বাচ্চাটা কোলে নিয়ে বাবার বাড়ির দিকে রওনা হয়ে গেলো। বাবার বাড়ি গিয়ে মিথুই অসুস্থ বাবাকে দেখতে না পেয়ে বোন ক্রাক্‌খিকে জিজ্ঞেস করলো,

– কই? বাবাকে যে দেখতে পাচ্ছি না। বাবা কোথায়?

উত্তরে যুবতি ফুলুমা ক্রাক্‌খি বললো,

– সে ভালো হয়ে গেছে। তাই কাজে চলে গেছে। ক্রাকখি তার দিদির কাছ থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে ঘরে বসে ফেলতে লাগলো। খেলতে খেলতে হঠাৎ করে তার দিদিকে বললো,

– ও দিদি, তোমার ছেলে তো তোমার গয়নাগাটি নিয়ে খেলতে চাচ্ছে।

শোনার সাথে সাথে মিথুই তার গায়ের গয়নাগাটি খুলে দিলো। এইদিকে ক্রাক্‌খি আগে থেকেই চুলোয় গরম পানি ফুটিয়ে রাখলো। খেলতে খেলতে ক্রাক্‌খি তার দিদির সমস্ত গয়নাগাটি কৌশলে ঘরের নীচে ফেলে দিলো। এদিকে মিথুইয়ের ফিরে যাবার সময় হয়ে এলো। মিথুই তার বোন ক্রাক্‌খিকে ডেকে বললো,

আমার যাওয়ার সময় হয়ে এলো রে। দিদির কথা শুনে ক্রাক্‌খি বললো,

– এখনই চলে যাবে? এদিকে তোমার ছেলে যে খেলতে গিয়ে তোমার সব গয়নাগাটি ঘরের নীচে ফেলে দিয়েছে।

উত্তরে মিথুই বললো,

– সমস্যা নেই। আমি তুলে নিয়ে যাচ্ছি।

এমন সময় ঘরের নিচে গয়না-গাটি তুলতে গেলে ক্রাক্‌খি উপর থেকে গরম পানি ঢেলে তার বোন মিথুইকে হত্যা করে ফেললো। তারপর যুবতি কুলুমা ক্রাখি মৃত মিথুইয়ের কাপড়চোপড়, গয়নাগাটি পরে মিথুইয়ের রূপ ধরলো। তারপর চড়ুই পাখির বাসা গিলে গিলে পেট ফুলিয়ে যেই না হাতির পীঠে চড়তে গেলো, অমনি ক্রাক্‌খিকে দেখে হাতিটা দ্রুত পালিয়ে গেলো। হাতিটা পালিয়ে যাওয়ায় ক্রাক্‌খি খুব বিরক্ত হল। তারপরও সে মিথুই সেজে রাজপুত্রের কাছে গিয়ে হাজির হলো। রাজপুত্র ক্রাক্‌খিকে চিনতে পারলো না সে মিথুই ভেবে ক্রাক্‌খির সাথে সংসার করতে লাগলো। আর এইদিকে মৃত্যুর পর মিথুইয়ের আত্মা ঘুরে ঘুরে এক সাক্রে গ্যায়াং-এ গিয়ে বক হয়ে জন্ম নিলো। সেই সময় ওই সাক্রে গ্যায়াং-এ রাজপুত্রের হাতির জন্যে ঘাস কাটতে আসতো তার চাকরেরা। রাজপুত্রের চাকরদের দেখে বকটি বললো,

– তোমাদের প্রভুকে জানিয়ে দিও, মিথুই এই সাক্রে গ্যায়াং-এ এসে বক হয়ে জন্ম নিয়েছে।

ঘাস কাটতে আসা চাকরেরা তাদের প্রভুর কাছে গিয়ে জানালো যে, তার স্ত্রী মিথুই বক হয়ে সাক্রে গ্যায়াং-এ জন্ম নিয়েছে। সাথে সাথে রাজপুত্র বকটিকে ধরে আনার নির্দেশ দিলো। চাকরেরা সাক্রে গ্যায়াং-এ গিয়ে বকটিকে ধরে এনে রাজপুত্রকে দিলো। রাজপুত্র ক্রাক্‌খিকে বললো, বকটিকে পোষ মানিয়ে ঘরে রাখতে। ক্রাকখি একটি খাঁচায় ভরে বকটিকে রেখে দিলো ঘরে। মাঝে মধ্যে বকটি খাঁচা থেকে বের হয়ে তার পুত্রের আশপাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো। একদিন বকটি তার পুত্রের চোখের ময়লাগুলি ঠোঁট দিয়ে পরিষ্কার করছিল, এমন সময় ক্রাক্‌খি সেটা দেখে ফেললো। ক্রাক্‌খি সাথে সাথে সন্দেহ করতে লাগলো, এ নিশ্চয় সাধারণ কোন বক পক্ষি নয়। এবার সে বকটিকে খাঁচা থেকে বের করে কেটে রান্না করে ফেললো। রান্না করা বকের মাংস নিজে পেট ভরে খেয়ে বাটিতে করে রাজপুত্রের জন্যে রেখে দিলো। রাজপুত্র কাজ সেরে দুপুরে খেতে এলে জিজ্ঞেস করলো,

– কি রেঁধেছ?

উত্তরে তার বউ ক্রাক্‌খি বললো,

– বকটি খুব শয়তান। ও আমার সন্তানের চোখে ঠোকর মারছিলো। তাই দেখে রাগে আমি ঐ বকটাকে কেটে রান্না করেছি।

রাজপুত্র বললো,

– আমি এই বকের মাংস খাবো না। যাও ওটাকে প্রস্রাবখানায় ফেলে আসো।

ক্রাক্‌খি রাজপুত্রের কথা মতো বকের মাংস প্রস্রাবখানার পাশে ফেলে দিয়ে এলো। যেখানে বকের মাংস ফেলে দিয়ে এলো, কিছুদিন পরে ঠিক সেখানেই একটি লাউ গাছ জন্ম নিলো। সেই লাউ গাছটি বড় হতে হতে ঘরের চালে উঠে পড়লো। গাছে মাত্র একটি লাউ ধরলো। সেই লাউ বড় হয়ে রাজপুত্রের ঘরের দরোজার সামনে ঝুলতে থাকলো। দরজা দিয়ে রাজপুত্র আসা যাওয়া করলে লাউটি জায়গা করে আর ক্রাক্‌খিকে দরজায় পেলে ধুমধাম করে মাথায় আঘাত করতো। রাগে একদিন লাউটিকে ছিঁড়ে রান্না করে ফেললো ক্রাক্‌খি। নিজে খেয়ে বাকিটুকু বাটিতে করে রেখে দিলো স্বামীর জন্য। কাজ সেরে সেদিনও দুপুরে রাজপুত্র ঘরে ফিরে ক্রাক্‌খিকে জিজ্ঞেস করলো,

– কি রেঁধেছ?

উত্তরে ক্রাকখি বললো,

– লাউটা পেকে যাচ্ছিলো। ছিঁড়ে রান্না করেছি।

এবারও রাজপুত্র লাউয়ের বাটি ফিরিয়ে দিলো, আমি এই লাউ খাবো না। যাও ওটাকে ওই কুয়াতে ফেলে দিয়ে আসো।

ক্রাক্‌খি লাউয়ের বাকি তরকারিটুকু কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে এলো। কিছুদিন পরে কুয়ার মধ্যে মিথুই জন্ম নিলো টাকি মাছ হয়ে। ওই কুয়াতে রাজপুত্র গোসল করতে এলে আড়ালে চুপ করে থাকতো সে। আর ক্রাক্‌খি এলে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে পুরো জল ঘোলা করে ফেলতো। দু’দিনের মাথায় গোসল করতে খুব অসুবিধায় পড়ে গেলো ক্রাখি। ঘোলা জল গায়ে ঢাললে সারা গাঁও ময়লা হয়ে যায়। সারা শরীর চুলকাতে থাকে। রাগে একদিন কুয়ার সমস্ত জল তুলে ফেলে টাকি মাছটাকে খটুজে বের করে রান্না করে নিজেও খেলো, আবার বাকিটুকু বাটিতে করে রেখে দিলো রাজপুত্রের জন্যে। দুপুরে কাজ থেকে ফিরে ক্রাক্‌খিকে জিজ্ঞেস করলো,

– আজ কি রেঁধেছ?

উত্তরে ক্রাক্‌খি বললো,

– কুয়ার মধ্যে যা একটা টাকি হয়েছিলো না, কি’যে সুন্দর! তাই চাকরদের দিয়ে ওই টাকি মাছটাকে ধরে এনে রান্না করেছি। খুব মজা হয়েছে। খেয়ে দেখো।

রাজপুত্র এবারও বললো,

– আমি এই মাছ খাবো না। যাও, ওটাকে পাশের বাড়ির নানীদের বাগানের বেল গাছের গোড়ায় ফেলে আসো।

ক্রাখি নিজের হাতে রান্না করা টাকি মাছ আর তরকারি সেই বেল গাছের গোড়ায় ফেলে দিয়ে এলো। কিছুদিন পর ওই বেলগাছে একটা বেল ধরলো। এতোকাল পরে গাছে একটা বেল ধরেছে দেখে বুড়ো-বুড়ি খুব খুশি হলো। বুড়ো বেলটাকে পেরে তেল মেখে বাক্সে ভরে রাখলো। বুড়োবুড়ি কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে বেলটা ওই বাক্স থেকে বের হয়ে রান্নাবান্না করে খেয়ে আবার বাক্সে ঢুকে পড়তো। বুড়ি ঘরে ফিরে জিনিস পত্র এলামেলো দেখে বুঝতে পারলো, কেউ একজন ঘরে এসে রান্না বান্না করে খেয়ে চলে যাচ্ছে। বুড়ি শেষ পর্যন্ত বুড়োকে বললো,

– তুমি আজ ঘরে থাকো। লুকিয়ে দেখো তো, কে এসে আমাদের খাবার খেয়ে যায়।

সকালবেলা বুড়ি চলে গেলো জুমে। আর বুড়ো ঘরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো, কে আসে প্রতিদিন! ধরবে এবার। বুড়ো মানুষ, অপেক্ষা করতে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিরক্ত হয়ে গেলো। বিরক্তি দূর করার জন্য বারান্দায় বসে মদ খেতে লাগলো। মদ খেতে খেতে অপেক্ষার কোন ফাঁকে যে ঘুমিয়ে পড়লো সে নিজেও টের পেলো না। বুড়ো ঘুমিয়ে পড়লে, বেলটা বাক্স থেকে বের হয়ে রান্নাবান্না করে খেয়ে দেয়ে আবারো বাক্সে ঢুকে গেলো। বিকেলে বুড়ি ঘরে ফিরে এসে দেখলো, মাতাল হয়ে শুয়ে আছে বুড়ো। আর রান্না ঘরে সেই গত দিনগুলির মতো একই ঘটনা ঘটে রয়েছে। মাতাল বুড়ো তাকে ধরতে পারেনি। অকর্মণ্য কোথাকার। পরের দিন বুড়োকে কাজে পাঠিয়ে নিজেই কাপড় সেলাই করে একটা ঝুড়িকে ঢেকে তার নিচে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।

“কে হতে পারে সে? যেই হোক, আজ আর তার রেহাই নাই। যে করেই হোক, ধরবোই আজ”

বুড়ি মনে মনে বলতে লাগলো। ঠিক সময়ে বাক্স থেকে বেড়িয়ে পড়লো বেলটি। নিজের মতো করে রান্ন বান্না করে, খেয়ে দেয়ে যেই বাক্সে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই বুড়িটা ঝুড়ির নিচ থেকে বের হয়ে বেলটিকে ধরে ফেললো, তারপর

“কে তুমি?”

বলে হাতের গামছা দিয়ে মুছতেই বেলটি পুণরায় মিথুইয়ে পরিণত হয়ে গেলো। বুড়ি মিথুইকে দেখে হতবাক হয়ে গেলো। এবার মিথুই বুড়িকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। বুড়ি বুঝতে পারলো মিথুইয়ের দুঃখ। সন্ধ্যায় বুড়ো জুম থেকে ফিরে এলে, তাকে পাঠিয়ে দিলো রাজপুত্রের কাছে। রাজপুত্রের কাছে গিয়ে বুড়ো সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। বুড়োর মুখে সব কথা শুনে, রাজপুত্র মিথুইকে প্রাসাদে নিয়ে আসতে বললো। তারপর ডাকা হলো ক্রাক্‌খিকে। মিথুই আর ক্রাক্‌খিকে হাজির করা হলো প্রাসাদে। এবার দু’জনকে দেখে রাজপুত্র নিজেই ঘাবড়ে গেলেন। আসলে কে হতে পারে মিথুই! তিনি বললেন,

“আসল মিথুই কে হতে পারে এর একটা পরীক্ষা হোক। পরীক্ষাটা হলো, এই ছোট্ট জগের ভেতর দিয়ে ঢুকে যে বের হয়ে আসতে পারবে, সেই আমার আসল মিথুই”।

এই কথা বলার পর মিথুই সহজেই ঢুকে বের হয়ে আসলো। রাজপুত্র বললো, তাতেই যে তুমি আসল মিথুই তা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তোমাদের আরও একটা পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। এই বলে একটা লোহার দাঁ ধরিয়ে দিলো ক্রাক্‌খিকে আর একটা কাঠের দাঁ ধরিয়ে দিলো মিথুইকে। তারপর বললো, তোমরা একজন আর একজনের সাথে লড়াই করবে। তারপর পরাজিত করে খুন করবে। এই লড়াইয়ে যে মারা যাবে সে ক্রাক্‌খি, আর যে বেঁচে থাকবে সেই আমার মিথুই। রাজপুত্রের কথা শুনে মিথুই তার কাঠের দাঁ দিয়ে ক্রাক্‌খির পেটে এক কোপ বসিয়ে দিলো। আর সাথে সাথে ক্রাক্‌খি মাঝখান থেকে কেটে দুই ভাগ হয়ে গেলো। পেট কেটে ভাগ হয়ে যাবার সাথে সাথে বেড়িয়ে এলো পেটভর্তি চড়ুই পাখির বাসা। এতোকাল বন্দি থাকার পর, মুক্তি পেয়ে ডেকে ডেকে উড়ে যেতে লাগলো চড়ুই পাখির দল। রাজপুত্র তার আসল স্ত্রী মিথুইকে আবার আগের অবস্থায় ফিরে পেয়ে অত্যন্ত খুশি হলো । এবং তারা সুখে শান্তিতে পুনরায় বসবাস করতে লাগলো।

 

টীকা:


ম্যায়াহ্ – বরশি ।। থবুইং – থামি ।। আঙ্গি – জামা ।। তঙসে – ছোট বাঁশের ঝুড়ি ।। ফুলুমা – রাক্ষসী ।। ক্রাক্‌খি-মা – কুৎসিত মেয়ে ।। চুং পুজো – মারমাদের এক বিশেষ পূজা, যা তান্ত্রিক চিকিৎসার জন্য করা হয়। ।। নুঙ – বাঁশের তৈরি এক ধরনের মাছ বা কাঁকড়া ধরার ফাঁদ ।। কোয়াইং – মাছ ধরার জাল ।। সাক্রে গ্যায়াং – ছনের বাগান


“ছোটকালে, দাদা-দাদীর মুখে শোনা এই গল্প বেশ প্রচলিত মারমা সংস্কৃতিতে। বয়োবৃদ্ধ আরও অনেকের মুখে শুনে শুনে লিপিবদ্ধ করেছি আরও নয় বছর আগে”।

গল্প সংগ্রাহক: অং মারমা

 

Related posts