মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত আমি লিখবো: পাওলো কোয়েলহো
পাওলো কোয়েলহোকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছুই নেই। জিঙ্গা ফুটবল ও সাম্বা নৃত্যের দেশ ব্রাজিল আজ পরিচিত একজন ‘দ্য অ্যালেকেমিস্ট’র জন্যও। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ ভাষায় প্রকাশিত হয় কোয়েলহোর অটোবায়োগ্রাফিক্যাল উপন্যাস ‘হিপ্পি’। কার্লা নাম্নী এক নারীর সঙ্গে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা তার এই উপন্যাস। মূল চরিত্রের নামও পাওলো। হিপ্পি প্রকাশের মাস খানেক পর ‘টাইম’ নামের এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেন কোয়েলহো। তা বাংলায় ভাষান্তরের ব্যর্থ প্রয়াস এটি।
আপনার নতুন উপন্যাস ‘হিপ্পি’, ১৯৭০ সালে আপনার দক্ষিণ আমেরিকা এবং য়্যুরোপ অন্বেষণের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা। এখন কেন এই গল্প লিখলেন?
পাওলো কোয়েলহো: আমাদের প্রতিবেশিরা কি বলতো তা শোনার সক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের মার্জিত আলাপ-আলোচনা রয়েছে, কিন্তু দিনশেষে, আমরা সেসব শুনি না। সে সময় এমন এক মুহূর্ত ছিল যখন আমরা আশাবাদী ছিলাম এবং ভাবতাম আমরা দুনিয়াটাকে বদলে দিতে চলেছি।
আপনি কি মনে করেন হিপ্পিদের জীবনে ডার্ক সাইড রয়েছে?
তাদের জীবনে ড্রাগ ও সেক্স রয়েছে, কিন্তু আমি এসবকে ডার্ক সাইড বলব না। বিশ্বের জন্য ড্রাগ কেমন বিপদজনক ছিল তা প্রচারে বহু অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি ড্রাগ তখনকার চেয়ে এখন অত্যধিক বিপদজনক।
আপনার প্রজন্ম সমাজ সম্পর্কে কী বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল?
আমার প্রজন্ম বুঝতো একবার হিপ্পি মানে সবসময় হিপ্পি। অবশ্যই, জেনেভায় আরামদায়কভাবে বসে আজকে আমি হিপ্পি হতে পারবো না। তবে আমার মূল্যবোধ এখনও আগের মতোই আছে: তোমার জীবনকে সহজসাধ্য করো, স্বাস্থ্যকর খাবার খাও, নারীদের সম্মান করো। আমার প্রজন্ম আমাদের ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা ও মনের কথা বুঝতো—কিন্তু তারপর সময় আসতো আমাদেরকেই তা সমর্থন করার। এবং দুইয়ের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য মধ্যস্থতা করা কঠিন হয়ে পড়তো।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি হিপ্পি সংস্কৃতিতে কম গুরুত্ব দিচ্ছে?
ট্রাম্প সম্পর্কে আমার কোনো মন্তব্য নেই। ট্রাম্প একটি আমেরিকান সমস্যা। লোকজন যখন আমার দেশ সম্পর্কে কথা বলা শুরু করে এবং কিভাবে আমরা তা পরিচালনা করি তা নিয়ে মতামত দিতে চেষ্টা করে তখন সেসবকে আমি ঘৃণা করি। সবকিছুর জন্য আমেরিকার প্রতি দায়বদ্ধ না হয়ে কিভাবে বেঁচে থাকতে হয় তা লোকজনকে শিখতে হবে।
‘হিপ্পি’তে আপনার প্রধান চরিত্রের গল্পের মৌলিকত্ব কি? যার নাম পাওলো। এবং কার্লা নামের মেয়েটির সঙ্গে যে ভ্রমণ করেন?
আমরা দুই ব্যক্তি ছিলাম যারা ছিল আমাদের সমস্ত সম্ভাবনা এবং জীবন সম্পর্কে অত্যন্ত উৎসাহী। কার্লা সেই নারী যে আমাকে তার সঙ্গে নেপালে যেতে বলেছিল। আমি গিয়েছিলাম কারণ অভিজ্ঞতা ছিল জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—এবং এখনও তাই আছে। কার্লা এবং আমি সফরের জন্য সক্ষম ছিলাম এবং নিজেরা ইচ্ছে করেই ঝুঁকি নিতাম। বইটিতে আমার কারাগারের বন্দীত্ব এবং নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলা হয়েছে কারণ মিলিটারি একনায়কত্ব আমাদের বুঝতো না।
দু’জনের একজন আরেকজনের প্রতি জটিল প্রেম রয়েছে উপন্যাসটিতে। আপনি কখনো প্রেমে পড়েছেন?
আমি মনে করিনা যে প্রেমে পড়েছি। ভালোবাসার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। ইরোস, প্রেম-কামের দেবী। ফিলিয়া, জ্ঞান-বন্ধুত্বের দেবী। এবং প্রাগমা (স্থায়ী প্রেমের দেবী), যে ভালোবাসা সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। বলছি, ৩৮ বছর ধরে আমি বিবাহিত। আমার স্ত্রীকে ছাড়া আমার জীবনকে দেখতে পারি না। সবসময় আমি ঘুমোতে যাওয়ার আগে, আমি তাকে দেখি এবং সে ততক্ষণে ঘুমোচ্ছে। এবং আমি নিজেকে নিজে বলি, ‘ও ঈশ্বর, আমাকে বুঝতে পারে এমন একজনকে খুঁজে পাওয়া, আমার জীবনের জন্য মহান আশীর্বাদ।’
৩০ বছর পেছনে ফিরে তাকালে দেখি আপনার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ প্রকাশিত হয়, এরপর কিভাবে আপনার জীবন বদলে গিয়েছিল?
‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ আমার জীবনের সবকিছু পাল্টে দিয়েছিল। তখন আমার বয়স ৪০, আর পরিবর্তন খুব ধীর প্রক্রিয়ায় হচ্ছিল, তাই মানিয়ে নেওয়ার সময় ছিল। আমি কখনও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়নি কারণ শূন্য থেকে আমি অনেক অর্থের মালিক হয়েছিলাম। তোমার আত্মাকে কিভাবে প্রকাশ করতে হয় তা জেনে তুমি কি করতে। এবং সেটাই এখন আমি করছি। আমার আশা, মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত আমি লিখবো।
শিগগিরই আপনার উপন্যাস থেকে নেওয়া কোনো মুভ্যি কি দেখার সুযোগ হবে আমাদের?
না। আমি কখনো চাই না আমার উপন্যাস থেকে কোনো মুভ্যি হোক। অবশ্যই, আমি যথেষ্ট নির্বোধ ছিলাম অথবা এটা ছিল দাম্ভিকতা, যখন ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ প্রকাশিত হলো, এটা খুব দ্রুতই হলিউডে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। যখন মুভ্যি হয়ে যায় তখন বইটির কোনো উন্নতি হয় না। বই এমন এক জিনিস যা পাঠকের সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করে। মুভ্যি—তোমার ইতোমধ্যে সবকিছু আছে।
ভাষান্তর: উপল বড়ুয়া