কবি ও কাকে পার্থক্য থাকলে তিনি অন্য মাত্রায় পৌঁছে যান ।। দ্রাবিড় সৈকত
প্রশ্ন :কবিরা কবে থেকে কাক হলো?
উ: প্রথমত প্রশ্নটি অবান্তর, অনাকাঙ্ক্ষিত, অপমানসূচক সর্বোপরি বিদ্রুপাত্মক। দ্বিতীয়ত প্রশ্নটি গ্রহন করে বিষয়টি তলিয়ে দেখা যায়, কবিদের কেন কাকের সাথে তুলনা করা হচ্ছে? কাকের কী এমন বৈশিষ্ঠ আছে যা কবিদের সাথে মিলে যায়?
১. কাক হট্টগোল করে, সুর-ছন্দ-তাল-লয়-মাত্রা বিষয়ে বিবেচনা রহিত,
২.কাক ভাগাড়ের প্রধান প্রাণী, উচ্ছিষ্টভোগী,
৩. কাক পাখি হওয়ার পরেও পাখির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত নয়,
৪. যত্রতত্র বিষ্ঠা ত্যাগ করে, ঔচিত্য অনৌচিত্তের বোধহীন
৫. তার কন্ঠ এবং বর্ণ কুতসিৎ বলে প্রচলিত,
৬. কাক নিজেকে বেশ চতুর মনে করে আদতে সে বোকা (শণের চালায় চোখ বন্ধ করে সাবান লুকানোর অভ্যেস তার এখনো আছে, সে ভাবে কেউ জানলো না, কিছুই বুঝলো না),
৭. চুরি, ছিনিয়ে নেয়া, অন্যের জিনিষে ভাগ বসানোর প্রবণতা তার আছে। আপাতত এই বৈশিষ্টগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে কবিদের কাকের সাথে তুলনা করা একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। আত্মপ্রত্যয়হীন অথবা ভুল প্রত্যয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া তথাকথিত কবির সংখ্যাই বেশি, কাজেই কাকের সাথে কবির তুলনা অপ্রত্যাশিত হলেও অমূলক নয়। কবিতা একটি পরিপূর্ণ এবং প্রধানতম শিল্প অথচ অনেক কবি পদবিধারী লোকেরই বিশ্বাস এর জন্য কোন সাধনা, অধ্যবসায়ের প্রয়োজন নেই; ভাষায় যিনি নামমাত্র লিখিতে এবং পড়িতে পারেন তিনিই কবি হইবার যোগ্যতা রাখেন! কাক হইবার আলাদা পরিচর্যার কিছু নেই কাকের সন্তান হওয়াই যথেষ্ট।
প্রশ্ন :মানুষজন কবিতা পুছে না ক্যান?
উ: পুছার মতো কবিতা লেখা হলেই পুছবে। না হয় পুছতে গেলে মুখমণ্ডল নোংড়া হওয়ার ভয় আছে।
প্রশ্ন : লোকে বলে ‘কবিদের খাওন নাই’ এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উ: লোকের এই ধারণা কবে থেকে হলো যে কবিতা একটা করে খাওয়ার জিনিশ? বাসা থেকে ভরপেট খেয়ে এসেই কবিতা লিখতে হয়, তারপর যেয়ে আবার খেতে হয়। কবিতা লিখে ভালো খাওনের দাবীদারগণ খাওন পায় না। কবিতা অন্যকিছু, খাওন থাকা না থাকার বাইরে। অকবি আধাকবি গাধাকবি বাঁধাকবিদের খাওন না পাওয়াই ভালো, তাতে কিছু খাবার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তোলা থাকতে পারে।
প্রশ্ন :ব্যাটা কবি এবং নারী কবি বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন?
উ: এসব অবান্তর প্রশ্ন কবিতা সম্পর্কে অজ্ঞতার প্রকাশ। যিনি কবিতা লেখেন তিনি কবি। কবিতায় লৈঙ্গিক বিভাজন মানসিক এবং সামাজিক বিকৃতি থেকে জন্ম নেয়া অসুখ। আর ব্যাটা কবিদের দেখি উত্থিত শিশ্ন হাতে শুধু উসখুশ করে, কবিতার নামে অবদমিত বাসনার উদগীরণ করে, ওসব ছোঁকছোঁকে ব্যাটা কবিরা শিশ্নকেই কলম ভেবে মৈথুনকাব্য লিখে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। তারা কবি নয় ব্যাটাকবি অথবা বেঁটেকবি। চটি সাহিত্য, টয়লেট সাহিত্য একেবারে ফেলে দেয়ার কিছু নেই। জগৎ আনন্দময় বৈচিত্রময় এবং কোথাও কোথাও পুতিদুর্গন্ধময় থাকুক।
প্রশ্ন :কবিতা লিখতে গিয়ে যা করেন না।
উ: গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, ফিচার, সংবাদ লেখার কসরৎ করি না।
প্রশ্ন :সমস্ত কবিরা কবিতা লেখা বন্ধ করে দিলে কি হতে পারে?
উ: মেধা ও শ্রমের অপচয় বন্ধ হতে পারে। অবশ্য এসব অকামে বিকারগ্রস্ত কবিগণ কিছুটা ব্যাস্ত থাকলে অন্যদের আরাম হয়। নাহয় সে অন্যকোন ক্ষতিকর কাজে নিয়োজিত হতে পারতো, এরচেয়ে ভালো নিরীহ গোছের কাব্যপনায় সময় পার করুক।
প্রশ্ন : কবিতা লেখেন কেনো?
উ: বাংলা ভাষায় লিখিতে ও পড়িতে পারি, তাছাড়া অনেক ফালতু কথা অবলীলায় কবিতাকারে বলে ফেলা যায়, গদ্যভাষায় বলতে গেলে মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ভাষায় সকল বাজে কথাকে শিল্প বলে চালিয়ে দেয়া যায়। শিল্প শুনলেই মানুষ ভয় পায়, নিজেরে মূর্খ মনে করে, এই সুযোগ কে হাতছাড়া করে?
প্রশ্ন 😐 কবিদের সেক্সুয়াল লাইফ কেমন হয়?
উ: কবিদের কোন যৌন জীনব নেই বলেই অবদমনের হাহাকার কবিতার মতো বের করে আনে। আর যখন সে যৌন অভিজ্ঞতার সুযোগ লাভ করে তখন প্রাণীকুলের স্বাভাবকি প্রবৃত্তিই প্রকাশ করে। আর দশটা সাধারণ মানুষের থেকে বিশেষ কোন পার্থক্য থাকার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তবে কবিরা অনুভূতির স্বরলিপি পাঠের ক্ষমতাগুণ সম্পন্ন বলে তাদের উপভোগের গভীরতা অনেক বেশি (এসব ভোগাস কথা বলে মাহাত্ব বাড়িয়ে তোলা যায়)।
প্রশ্ন : কবিতা হয়ে গেলে কবি কি হয়?
উ: পরিপূর্ণ
প্রশ্ন :আপনি কি কবি?
উ: কবিকে বলা হয় ত্রিকালদর্শী। পাঁচটা আধাকবিতা লিখে কবি উপাধি নিয়ে বন্ধুমহলে আলাদা আসন অনেকেই পেয়ে যান, তাদের জন্য করুণা। একটা হতাশ, লোভাতুর, অন্ধ, বিকৃত, মূর্খ ও গোয়ার গোষ্ঠীকে বাংলায় আমরা কবি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেই।
প্রশ্ন : কুত্রাপি পড়া কেন জরুরী
উ: বাংলা কবিতার নতুন বাঁকের সম্ভাবনার বীজ এখানে রোপিত আছে বলেই জরুরী।
প্রশ্ন :ছোট কাগজের কংকালে কে পরাবে রক্তমাংস?
উ: দূর থেকে দেখলে প্রকৃত ছোট কাগজকে কংকালসার মনে হতে পারে কিন্তু এরা মূলত তপ্ত রক্তের উন্মত্ত স্রোতরাশি। যদিও ছোট কাগজ নামে এখন প্রবল বিভ্রান্তি চলছে। আক্ষরিক অর্থে ছোট লোকেরাই এখন ছোট কাগজের হর্তাকর্তা (ব্যতিক্রম আছে)। যুগে যুগেই এমন ছিলো, আবর্জনার ভীড় ঠেলে আপনাকে যেতে হবে।
প্রশ্ন 😐 ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’
জীবনানন্দ দাশের এই উক্তিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
উ: কেউ কেউ কবি নয় সকলেই কবি, ফেইজবুক এর বড় প্রমাণ, জীবনানন্দ দাশ এই সময়ে বেঁচে থাকলে কথাটি সংশোধন করে দিতেন।
প্রশ্ন :সমকালীন কবি ও কবিতা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উ: সমকালীন কবি এবং কবিতা দুটোই অত্যন্ত বিপদগ্রস্ত। ডিজিটাল মিডিয়া এবং বাংলা লিখন পদ্ধতির সহজলভ্যতার কারণে বিশেষত বাংলা কবিতায় টনকে টন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে, যদি আপনি ভালো বর্জ্যব্যবস্থাপক না হোন তাহলে কবিতা আর আবর্জনার পার্থক্য করতে পারবেন না। নতুন পাঠক এবং